আমরা এক কাতারে দাঁড়াবো বলে

পুনম মায়মুনী, রায়ের বাজার, ঢাকা- ১২০৯

যেদিন বাংলার মুখে পড়েছিল, রক্তলোলুপ হায়েনাদের দৃষ্টি
ওরা চরম অবমাননার সাথে আমার মায়ের জবান
স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল ,চিরতরে…
আমি গর্জে উঠে আহ্বান করেছিলাম,
বাংলার সন্তানদের
আমরা এক কাতারে দাঁড়াবো বলে ।
আমার ডাকে সারা দিয়ে ভাষা আন্দোলন গড়ে উঠে, গণআন্দোলনে
সেদিন মিছিল , মিটিং, জনসভা আর স্লোগানে
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া বিদ্রোহের দাবানলে
কেঁপে উঠেছিল
সেদিন উত্তাল করে বেজেছিল, প্রতিবাদী কণ্ঠ
উত্তপ্ত বাংলার আকাশে বাতাসে
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই…
সেই আন্দোলনের অপরাধে, বিভিন্ন জেলে
বন্দী থেকেছি
তবু বিন্দু পরিমাণে দমে থাকিনি আমি
গোপনে চিরকুট দিয়ে আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছি কারণ
খোকা যে বড়ো ভালোবাসে, তাঁর মায়ের ভাষা !
তাইতো প্রাণপণ বিশ্বের দরবারে বাংলাভাষার
পরিচিতি, স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছি
পৃথিবীর ইতিহাসে বাহাত্তরের প্রথম
বাংলাভাষায় প্রণীত সংবিধান তারই কথা বলে ।
যেদিন জেনেছিলাম,
কুচক্রী পাকিস্তানীদের নীলনকশা
বাঙালীদের স্বাধীনতা হরণে তাঁদের ঘৃণ্য
ষড়যন্ত্রের কথা,
আমরা এক কাতারে দাঁড়াবো বলে
সেদিন বলিষ্ঠ কণ্ঠে ইঙ্গিত করেছিলাম,
বাংলার সারে সাত কোটি মানুষের ঘরে ঘরে
দুর্গ গড়ার
শত্রুর মোকাবেলায় যা কিছু আছে তা নিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়ার।
সাতই মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে
বজ্রকন্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলাম,
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ।
আমার ডাকে লাখো লাখো মুক্তিসেনারা
মন্ত্রমুগ্ধের মতো কাঁধে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র
পাকহানাদের দমনে,
বন্দী হলাম আমি পাকিস্তান কারাগারে
তখনো দমে থাকিনি ,বাংলার মানুষের মুখে
হাসি ফুটাতে
মৃত্যুবরণে আমি যে সদা প্রস্তুত।
সমগ্র বাঙালী জাতির চেতনায় সেদিন জেগে উঠেছিল
স্বাধীনতা ও পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার বোধ আর
পরিণত হলো একটি গণযুদ্ধ,
একাত্তরের নয়মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ।
শকুনিদের হটিয়ে, বীরদর্পে লাল সবুজের
পতাকা উড়িয়ে বিজয়য়ের ডাক দিলে ,
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু…
আমায় ভালোবেসে যদি উপাধি দিলে
বাঙালি জাতির পিতা, বাঙালি জাতির জনক
অন্তর দিয়ে যদি ডেকেছিলে ,বঙ্গবন্ধু…
তবে কেন পঁচিশের সেই ঘৃণিত রাত্রির মতো
পনেরোই আগষ্ট জাতির মুখে কলঙ্ক লেপন করে
ইতিহাস রচনা করলে আরও একটি ভয়াবহ
লজ্জার কালরাত্রি!
আমায় বুলেটের আঘাতে আঘাতে ঝাঁঝরা করে
ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত দেহটাকে নিথর করে দিলে
এ বাংলার বুকে…
আমায় হত্যা করে নির্বংশ করতে চেয়েছ কিন্তু
পারলেনা আমার নীতি ও আদর্শকে হত্যা করতে
আমার আদর্শের যে বীজ আমি রোপণ করে গেছি
হাজার হাজার মুজিব জন্মাবে, এই বাংলার মাটিতে।
বলো, কী অপরাধ ছিল আমার,
বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার?
বাঙালী জাতিসত্তাকে বিকশিত করার?
বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্রের
সংযোজন স্থাপন করার?
নাকি স্বাধিকার আনতে ,স্বাধীন সার্বভৌম
একটি বাংলাদেশ তোমাদের উপহার দেওয়ার অপরাধ?
বিশ্বাস কর, আমি প্রধান মন্ত্রিত্ব চাইনি
বাংলার মানুষ স্বাধীনতা চায়
আমি যে বাংলার মানুষকে বড়ো ভালোবাসি!
তাই চেয়েছিলাম ,
আমার দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার
কৃষক ,কুলী, মজুর ,শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার
আমি চেয়েছিলাম,
উঁচু-নিচু, সাদা-কালো সব ভেদাভেদ ভুলে
আমার বাংলা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
আমরা এক কাতারে দাঁড়াবো বলে
আলোকিত একটি সোনার বাংলাদেশ গড়বো বলে।

পুনম মায়মুনী_

One thought on “আমরা এক কাতারে দাঁড়াবো বলে”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *